প্রভুর প্রেমে পড়েছি আমি

 

প্রভুর প্রেমে পড়েছি আমি 

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 

যতই আমি নিজের ভেতর তাকাই, ততই মুগ্ধ হয়ে যাই আমার প্রভুর সৃষ্টির কারুকার্যে। প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি ধ্বনি, প্রতিটি রঙে আমি দেখি তাঁর দয়া, তাঁর ভালোবাসা। মনে হয়—আমি যেন এক নেয়ামতের সাগরে ভাসছি, যার কোনো তীর নেই। সত্যিই, প্রভুর প্রেমে পড়েছি আমি!

আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, প্রতিটি কোষ, প্রতিটি সঞ্চালন যেন তাঁর অসীম রহমতের নিদর্শন। চক্ষু দিয়েছেন, যাতে আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখি; কান দিয়েছেন, যাতে শুনতে পারি তাঁর বাণীর সুর; জিহ্বা দিয়েছেন, যাতে উচ্চারণ করতে পারি “আলহামদুলিল্লাহ।” এ নেয়ামতের কোনো হিসাব নেই, কোনো সীমাও নেই।

“আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গুনতে চাও, কখনোই তা গুনে শেষ করতে পারবে না।” (সূরা নাহল, আয়াত ১৮)

রাতের নীরবতায় যখন চাঁদ আকাশে জোৎস্না ছড়ায়, মনে হয়—এ আলোও তো প্রভুর করুণার ছায়া। সূর্য যখন প্রভাতকে আলোকিত করে, মনে পড়ে যায়—এ আলোও এক দয়া, যা ছাড়া জীবন অচল। প্রতিটি বাতাসের ঝাপটা, প্রতিটি বৃষ্টিধারা, প্রতিটি গাছের সবুজ পাতা—সবই একেকটি ভাষায় বলছে: “এই দুনিয়ার পেছনে রয়েছেন এক মহান স্রষ্টা।”

“أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ”
“তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ তোমাদের জন্য আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন।” (সূরা লুকমান, আয়াত ২০)

প্রভুর প্রেমে ডুবে গেলে বোঝা যায়, প্রতিটি নেয়ামতের মধ্যে রয়েছে এক অদৃশ্য ভালোবাসা। আমরা যে শ্বাস নিচ্ছি—এটাই জীবন, এটাই দান। আমরা যে হাসছি, ঘুমাচ্ছি, চলছি—সবই একেকটি দয়ার প্রতিফলন। এমনকি আমাদের কষ্টও কখনো কখনো তাঁর রহমতের ছায়া, কারণ কষ্টই আমাদের আত্মাকে পবিত্র করে, প্রভুর কাছাকাছি নিয়ে যায়।

আমি যখন নিজেকে দেখি, বুঝতে পারি—আমার অস্তিত্বের প্রতিটি বিন্দু তাঁর কৃপায় গঠিত। এই হৃদয়, যা ভালোবাসে; এই চোখ, যা কান্না করে; এই মন, যা অনুভব করে—সবই তো তাঁর দান। আমি যেন এক গাছ, যার প্রতিটি পাতা তাঁর রহমতের জলে সিক্ত।

প্রকৃতির দিকে তাকালেই তাঁর সত্তা অনুভব করা যায়। পাহাড়ের উচ্চতা যেন বলে—“আমার রব মহান।” নদীর বয়ে চলা স্রোত যেন বলে—“আমার রব সর্বদয়।” ফুলের রঙে, পাখির কূজনে, শিশিরবিন্দুর ঝলকে, এমনকি মরুর নিস্তব্ধতাতেও তাঁর নাম প্রতিধ্বনিত হয়। প্রকৃতি হলো এক অবিরাম তাসবিহ, যা সারাক্ষণ ঘোষণা করে: “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম।”

আমাদের খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, আশ্রয়, পোশাক—সবই তাঁর দান। যদি এক মুহূর্তের জন্য তিনি শ্বাস ফিরিয়ে নেন, আমরা কিছুই করতে পারব না। অথচ তিনি দেন অবিরাম, বিনিময়ে কিছু চান না—শুধু ভালোবাসা, শুধু কৃতজ্ঞতা। সত্যিই, আমরা এমন এক প্রভুর বান্দা, যিনি দুনিয়ার সব সৌন্দর্য আমাদের পায়ের তলায় বিছিয়ে দিয়েছেন।

“وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ”
“তোমাদের নিকট যে কোনো নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে।” (সূরা নাহল, আয়াত ৫৩)

আমি যখন এইসব ভাবি, আমার অন্তর কেঁপে ওঠে। মনে হয়, আমি এক অসীম ভালোবাসার মহাসাগরে নিমজ্জিত। আল্লাহর প্রেমে ডুবে গেলে পৃথিবীর সব দুঃখ ছোট মনে হয়, সব কষ্ট মিষ্টি লাগে। তিনি আমার প্রভু—আমার রব, আমার প্রেম, আমার সর্বস্ব।

তবুও এই ক্ষুদ্র লেখায় সেই আবেগের পূর্ণ প্রকাশ সম্ভব হলো না। আমি বেশি লম্বা করতে চাইনি, কিন্তু অন্তরের অনুভূতির প্রবাহে কলম থামানো গেল না। এজন্য আমি বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এই লেখাটি যেন আমার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি হয়, আমার রবের সামনে বিনীত এক কবিতা—যেখানে প্রতিটি অক্ষর তাঁর প্রেমে পরিপূর্ণ।

— মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি