আরবি শিক্ষার দিশারী এক অনন্য কিতাব

 

আরবি শিক্ষার দিশারী এক অনন্য কিতাব

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 
 

আরবি ভাষা হলো কুরআন, হাদীস ও ইসলামী জ্ঞানের মূল চাবিকাঠি। এই ভাষা আয়ত্ত করা ছাড়া কোনো তালেবে ইলমের জন্য দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। আর এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, হযরত মাওলানা মুফতী শরীফুল ইসলাম জুরাইন হুজুর এমন একটি কিতাব লিখেছেন যা পুরো বাংলাদেশের মাদ্রাসা জগতের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। সেই কিতাবের নাম درس اللغة العربية। এটি আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে আরবি শিক্ষার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করছে।

প্রচলন ও সাড়া

আজকের দিনে এই কিতাবের উপকারিতা এতটাই সুস্পষ্ট যে, মিজান জামাত থেকে শুরু করে বহু মাদ্রাসায় এটিকে নেসাবের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বহু সংখ্যক তালেবে ইলম এই কিতাবটি পড়ে আরবি ভাষায় চমৎকার যোগ্যতা অর্জন করছে। যারা একসময় আরবিতে দুর্বল ছিল, তারাও درس اللغة العربية পড়ার পর ভাষার প্রতি এক ধরনের আত্মবিশ্বাস অর্জন করছে। তাদের মুখের উচ্চারণ, কলমের লিখনশৈলী এবং চিন্তার গঠন—সব কিছুতেই এসেছে নতুনত্ব ও সাবলীলতা।

মুসান্নিফের অবদান

হুজুর কেবল একজন লেখক নন, বরং একজন চিন্তাশীল শিক্ষক, যিনি তালেবে ইলমদের অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন—বাংলাদেশের ছাত্ররা আরবির ভীত কোথায় দুর্বল, এবং কীভাবে সেই দুর্বলতা দূর করা যায়। সেজন্যই তিনি এমন একটি কিতাব রচনা করেছেন যা শুধু তত্ত্ব নয়, বরং ব্যবহারিক দিক থেকেও আরবি শেখার এক অমূল্য সহায়ক।

তামরিন ও অনুশীলন

এই কিতাবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর তামরিন। শুধু ব্যাকরণ বা নাহু-সরফের নিয়ম শিখিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, বরং প্রতিটি অধ্যায়ে ব্যবহারিক অনুশীলনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বাক্য গঠন করতে পারে, নতুন নতুন বাক্য ব্যবহার করতে পারে এবং বাস্তব জীবনে আরবির প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। এটাই একে অন্যান্য কিতাব থেকে আলাদা করেছে।

প্রকাশনা ও বিন্যাস

درس اللغة العربية কিতাবটি তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে মাকতাবাতুল আযহার থেকে। প্রতিটি খণ্ডে আছে ধারাবাহিকতা, ক্রমান্বয় এবং সহজ-সরল ভাষায় ব্যাখ্যা। এর সাথে একটি মুকাদ্দামাও সন্নিবেশিত হয়েছে, যা পাঠকদের জন্য কিতাবের উদ্দেশ্য ও মুসান্নিফের চিন্তার দিক নির্দেশ করে। প্রতিটি খণ্ডে এমনভাবে বিষয় সাজানো হয়েছে যাতে ছাত্র ধাপে ধাপে ভাষার প্রতিটি স্তরে পারদর্শী হতে পারে।

বাংলাদেশের মাদ্রাসা জগতে বিপ্লব

একসময় বাংলাদেশে আরবি শেখার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের বইগুলো ছাত্রদের মধ্যে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারতো না। অনেকেই মিজান জামাত পার হয়ে গেলেও সাবলীলভাবে আরবিতে নিজের কথা প্রকাশ করতে পারতো না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, درس اللغة العربية আসার পর এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন ছাত্ররা সহজেই আরবিতে বাক্য গঠন করতে পারে, ক্লাসে শিক্ষককে আরবিতে প্রশ্ন করতে পারে এবং আলোচনায় অংশ নিতে পারে।

তালেবে ইলমদের অর্জন

যারা এই কিতাব পড়ছে তারা আরবি ভাষায় শুধু দক্ষতা অর্জন করছে না, বরং তাদের চিন্তাশক্তিতেও এসেছে গতি। অনেক ছাত্র নিজেদের মধ্যে অনুশীলন করে নতুন নতুন ব্যবহার তৈরি করছে। কিতাবের প্রতিটি লেসনের তামরিন করার মাধ্যমে তারা নিজেরাই আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে যে, আরবি তাদের জন্য আর কঠিন নয়। এটি এক বিশাল সাফল্য, যা এই কিতাবের মুসান্নিফের জন্য এক অম্লান সওয়াবের কারণ হবে ইনশাআল্লাহ।

একটি আলোকবর্তিকা

বলা যায়, درس اللغة العربية আমাদের দেশে আরবি শিক্ষার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি শুধু একটি বই নয়, বরং এক আলোকবর্তিকা, যা ছাত্রদের অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাচ্ছে। যারা আগে আরবি শিখতে নিরুৎসাহিত ছিল, তারা এখন এই কিতাব পড়ে নতুন উদ্যমে অগ্রসর হচ্ছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

আমি নিজেও এই কিতাবটি দেখে এবং পড়ে গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, এ কিতাবের প্রতিটি অধ্যায় আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে। আমার মনে হয়েছে—যদি বাংলাদেশের প্রতিটি মাদ্রাসায় এই কিতাব বাধ্যতামূলক করা যায়, তবে ছাত্রদের আরবি দুর্বলতা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। হুজুর যে শ্রম দিয়ে এটি লিখেছেন, তা সত্যিই কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করতে হয়।

ক্রয়ের অনুরোধ

প্রত্যেক তালেবে ইলমের জন্যই এই কিতাব সংগ্রহ করা উচিত। শুধু ছাত্ররা নয়, বরং শিক্ষক, গবেষক ও সাধারণ পাঠকরাও এই কিতাব থেকে উপকৃত হতে পারবেন। যারা আরবি শিখতে চান বা ভাষায় উন্নতি করতে চান, তাদের জন্য এটি অপরিহার্য। আজকের দিনে এটি এমন এক উপহার, যা প্রতিটি মাদ্রাসার বুকশেলফে থাকা জরুরি।

পরিশেষে বলতে চাই,,,

সর্বশেষে বলা যায়, درس اللغة العربية কিতাবটি বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক বিরাট সম্পদ। হুজুরের এই উদ্যোগ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করবে ইনশাআল্লাহ। আরবি শেখা হবে সহজ, সাবলীল ও আনন্দময়। আল্লাহ তাআলা হুজুরকে দীর্ঘ হায়াত দান করুন, তাঁর কলমকে বরকতময় করুন এবং আমাদের সবাইকে এ কিতাব থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়ার তাওফিক দিন। আমীন।

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি