আরবি দুর্বলতার বাস্তবতা ও উত্তরণের পথ

 

আরবি দুর্বলতার বাস্তবতা ও উত্তরণের পথ

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 
 

বহুদিন ধরে আমি একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছি এবং সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে, আমাদের মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে আরবিতে দুর্বলতা অত্যন্ত প্রকট। এই দুর্বলতার কারণে তারা সাধারণ কিতাব বুঝতে পারে না, এমনকি বড় জামাতে ওঠার পরও কিতাব মুতালাআ করতে গিয়ে অসহায় বোধ করে। কেউ মেশকাত পর্যন্ত পড়ে, কেউ দাওরাহতেও পৌঁছে যায়; কিন্তু আরবির ভিত মজবুত না হওয়ায় কিতাবের বক্তব্য বোঝা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়।

হাদীসের কিতাবগুলো, যেমন— সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, বা সুনান আবু দাউদ— এগুলো আসলে গভীর আরবির অনুধাবন ছাড়া সম্ভব নয়। অথচ ছাত্ররা দাওরাহয় পৌঁছে গিয়ে বুঝতে পারে না আসল সমস্যাটা কোথায়। সমস্যাটা মূলত শুরুতেই ভিত মজবুত না করার মধ্যে। মিজান জামাত থেকেই আরবির প্রতি উদাসীনতা শুরু হয়। কেবলমাত্র “এসো আরবি শিখি” জাতীয় প্রাথমিক কিতাবগুলো পড়ানো হয়, কিন্তু চর্চা হয় না।

হেদায়াতুন্নাহু কিংবা কাফিয়া জামাতে এসে ছাত্ররা নাহু ও সরফের মৌলিক ধারণাগুলো গেঁথে নিতে পারে না। এ কারণেই তাদেরকে জালালাইন কিংবা শরহে বেকায়ার মতো কিতাবের সামনে অসহায় হয়ে পড়তে হয়। তারা না নাহু বোঝে, না সরফ বোঝে, না তারকিব বোঝে। অথচ এগুলো ছাড়া আরবির দুয়ার খোলেই না।

"যে নাহু ও সরফ আয়ত্ত করবে না, তার পক্ষে আরবি কিতাব পড়া শুধু কল্পনা মাত্র।"

কিভাবে আরবি ভাষা আয়ত্ত করতে হবে?

প্রথমত, ছাত্রদেরকে নাহু ও সরফের মুলনীতি গভীরভাবে বুঝে শিখতে হবে। প্রতিদিন কিছু না কিছু নতুন মিসাল বা উদাহরণ বের করতে হবে। শুধু পাঠ মুখস্থ করে রাখলেই হবে না, বরং চর্চা ও প্রয়োগ করতে হবে। যেমন:

  • প্রতিদিন তারকিব করা: কুরআনের আয়াত কিংবা হাদীস থেকে বাক্য নিয়ে তারকিব করা।
  • রোজনামচা লেখা: প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ লাইন আরবিতে লেখা, যাতে ছাত্ররা ধীরে ধীরে সাবলীল হয়ে যায়।
  • আলাপচারিতা: বন্ধুদের সাথে সহজ বাক্যে হলেও আরবি ভাষায় কথা বলা।

আরবি ব্যবহারের কয়েকটি মূলনীতি (بعض القواعد لاستعمال العربية)

١- لا بد من ممارسة اللغة كل يوم، فإن الممارسة هي سر النجاح.
٢- اقرأ كثيرًا من النصوص العربية: القرآن، الحديث، والأدب العربي.
٣- اكتب يوميًا ولو جملة واحدة بالعربية، فإن الكتابة تُرسّخ المعلومات في الذهن.
٤- لا تخف من الخطأ، فإن الخطأ هو طريق الصواب.
٥- اجعل اللغة العربية وسيلة للتفكير، لا تجعلها مجرد مادة دراسية.

কোন কোন কিতাব পড়া যেতে পারে?

যারা আরবিতে যোগ্য হতে চায় তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাব অবশ্যপাঠ্য:

  1. قطر الندى وبل الصدى – ইবন হিশাম
  2. شذور الذهب – ইবন হিশাম
  3. شرح ابن عقيل على ألفية ابن مالك
  4. المفصل في علم العربية – الزمخشري
  5. الأجرومية – ইবনে রুমি
  6. دلائل الإعجاز – আবু বকর আল-জুরজানি

উপরন্তু, ছাত্রদের উচিত আরবি সাহিত্য পড়ার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। যেমন— نهج البلاغة, مقامات الحريري, এবং সমকালীন আরবি সাহিত্যও পড়া যেতে পারে। এগুলো আরবি ভাষায় দখল মজবুত করবে।

শিক্ষকদের ভূমিকা

শুধু ছাত্রদের নয়, আসাতিযায়ে কেরামেরও উচিত ছাত্রদেরকে আরবিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। শিক্ষক যদি ছাত্রকে অনুপ্রাণিত করেন, প্রতিদিন কিছু না কিছু আরবি লিখতে ও বলতে উদ্বুদ্ধ করেন, তবে ধীরে ধীরে ছাত্রদের দুর্বলতা কেটে যাবে। মাদরাসার পরিবেশকেই আরবি-বান্ধব পরিবেশ বানাতে হবে।

শেষ কথা হলো— আরবির ভিত মজবুত করা ছাড়া ইলমে দীন আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। ছাত্ররা যদি নাহু-সরফে মেহনত করে, প্রতিদিন আরবি চর্চা করে, তবে একদিন কিতাবগুলো তাদের জন্য উন্মুক্ত বাগানের মতো হয়ে যাবে। তখন কোনো কঠিন কিতাবই কঠিন মনে হবে না, হতাশাও গ্রাস করবে না।

আরবি ভাষা— ইলমে দীন শেখার মূল দরজা। দরজা খুলতে হলে, আমাদেরকেই চাবি ঘুরাতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি