কাফিয়ার নতুন তাহকীক ও তালিবুল ইলমের প্রয়োজনীয়তা

 

কাফিয়ার নতুন তাহকীক ও তালিবুল ইলমের প্রয়োজনীয়তা

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 
 

প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আমি মাদানীনগর মাদ্রাসায় যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করি। সেখানে একটি টেবিলের উপর নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত كافية ابن الحاجب কিতাবটি চোখে পড়ে। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সম্মানিত আবু সাঈদ সাহেব হুজুর এ কিতাবটির বিস্তারিত শরাহ করেছেন এবং নির্ভরযোগ্য বহু مخطوطات সামনে রেখে এর তাহকীক সম্পন্ন করেছেন। বইটি হাতে নিয়েই মনে হলো—এ যেন এক নতুন দিগন্ত। আলোচনা ও ব্যাখ্যাগুলো এতটাই সুন্দর ও নির্ভুল হয়েছে যে, ছাত্ররা এর থেকে অসাধারণ ফায়দা পাবে।

আমি সবাইকে আহ্বান জানাই—যারা কাফিয়া পড়ছো বা পড়বে, অবশ্যই এই কিতাব সংগ্রহ করো। এর উপকারিতা অসীম। আলহামদুলিল্লাহ, এই কিতাবে যে হাশিয়া সংযোজিত হয়েছে, তা মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য। একজন তালিবুল ইলম যদি হাশিয়া সহকারে মুতালাআ করে, তাহলে আর অন্য কোনো শরাহ পড়ার প্রয়োজন অনুভূত নাও হতে পারে।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

যখন আমি কাফিয়ায় ছিলাম, তখন شرح الرضي আমার নিত্যসঙ্গী ছিল। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মুতালাআ করতাম। একইভাবে تحرير سمبَط কিতাবও আমি পড়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, এই কিতাবগুলোর আলোচনায় আমি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো ধরতে সক্ষম হয়েছি। যদিও কাফিয়া অনেকাংশে প্রশ্নোত্তর আকারে সাজানো, অনেকেই এটাকে অহেতুক মনে করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো— এই প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমেই চিন্তাশক্তি প্রসারিত হয় এবং গভীর নাহুর জটিলতা সহজে মনের ভেতর গেঁথে যায়।

"النحو صعب مستصعب على من لا يتقنه، لكنه يسير على من صبر وداوم."
(একজন নাহু বিদ্বান)

এসো কিছু ব্যবহার বুঝি,,

নাহুর সৌন্দর্যই হলো এর সূক্ষ্ম জটিলতা। নিচে কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হলো:

  • مفعول مطلق: যেমন— ضربت ضرباً شديداً। এখানে ضرباً হলো মাফউল মুতলাক, যা ফেয়েলকে জোরদার করছে।
  • تمييز: যেমন— اشتريت عشرين كتاباً। এখানে كتاباً তামিয।
  • إعمال المصدر: যেমন— سرني قيامُك। এখানে مصدر قيام ক্রিয়ার কাজ করছে।
  • إعراب المشكل: যেমন— إنما المؤمنون إخوة। এখানে إخوة খবর, কিন্তু إنما কাঠামোতে এর প্রয়োগ সূক্ষ্ম নাহু বিশ্লেষণ ছাড়া বোঝা কঠিন।
  • المبتدأ والخبر في باب كان وأخواتها: যেমন— كان الله غفوراً رحيماً। এখানে الله হলো اسم كان আর غفوراً হলো خبر كان।

এসব সূক্ষ্ম নিয়ম প্রথমে জটিল মনে হলেও, একবার আয়ত্ত করলে তা ভাষার সৌন্দর্য ও গভীরতা প্রকাশ করে। তাই কঠিনতার ভয়ে দূরে সরে যাওয়া উচিত নয়, বরং নিয়মিত মুতালাআ ও তাকরারের মাধ্যমে সহজ করে নেওয়া উচিত।

কাফিয়ার শরাহসমূহ

কাফিয়ার উপর বিভিন্ন যুগে বহু শরাহ রচিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:

  • شرح الرضي
  • هداية السالك (হাদিয়াহ)
  • الوافية
  • النهاية
  • ناحية
  • هادية

প্রত্যেকটি শরাহ-ই নাহুর ভিন্ন ভিন্ন সূক্ষ্ম দিক উন্মোচন করে। তবে ছাত্রদের জন্য হাশিয়াসহ নতুন তাহকীককৃত সংস্করণ বিশেষভাবে উপযোগী হবে ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে প্রিয় তালেবে ইলম ভাইয়েরা,,

নাহুর জটিল পথচলা সহজ নয়, কিন্তু যিনি ধৈর্য ধরে নিয়মিত মুতালাআ করবেন, তার জন্য এটি সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। নতুন প্রকাশিত কাফিয়ার এই তাহকীক ও শরাহ ছাত্রদের জন্য এক বিশাল সম্পদ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নাহু শাস্ত্রে পারদর্শিতা দান করুন এবং এর আলোকে কুরআন ও সুন্নাহর গভীর মর্ম বোঝার তাওফিক দিন। আমীন।

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি