জীবনের কষ্ট ও সান্তনার সন্ধান
জীবনের কষ্ট ও সান্তনার সন্ধান
আমি উপলব্ধি করি, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আরাম আর স্বস্তি থাকবে না। কখনো দুনিয়ার সুখ এসে মুখে হাসি ফুটাবে, আবার কখনো নানান রকমের কষ্ট এসে হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করবে। এই দুনিয়া আসলে পরীক্ষার স্থান। কষ্ট, ক্লেশ, পেরেশানি—এসবই আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জীবনের নানান ধরনের কষ্ট
আমি দেখি, কখনো পড়াশোনায় সফল না হওয়ার কষ্ট বুকে ভার হয়ে বসে। কখনো চোখে দেখতে না পারার কষ্টে মানুষ অন্ধকারে ডুবে যায়। কখনো সবার সামনে কথা বলতে না পারার অস্বস্তি ও লজ্জা হৃদয়কে গলিয়ে দেয়। আবার কখনো প্রিয়জনের মৃত্যু, অভাব-অনটন, দারিদ্র্য, সামাজিক অবমূল্যায়ন কিংবা ব্যর্থতার তীব্র যন্ত্রণা জীবনকে দুঃসহ করে তোলে।
শুধু তাই নয়, সারাদিনের জীবনযাত্রায় আমরা কত কষ্টের সম্মুখীন হই। সকালে ঘুম ভেঙেই সংসারের চিন্তা, রাস্তায় যানজট, কর্মস্থলের চাপ, শিক্ষক বা সহপাঠীর বকুনি, অর্থের টানাপোড়েন—সব মিলিয়ে কষ্ট যেন ছায়ার মতো আমাদের অনুসরণ করে।
মনকে কীভাবে সান্তনা দিব
আমি জানি, কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। তবে কষ্টকে মোকাবিলা করার শক্তি অর্জন করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন দৃঢ় বিশ্বাস, ধৈর্য ও ইতিবাচক চিন্তা। আমি শিখেছি, কষ্ট আসলে সেটাকে ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করতে হবে এবং ভেবে নিতে হবে—এটিও আল্লাহর পক্ষ থেকে এক পরীক্ষা।
মনকে সান্তনা দিতে হলে প্রথমেই মনে করতে হবে, প্রতিটি কষ্টের পেছনে আল্লাহর হিকমত রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই আছে স্বস্তি
(সূরা আশ-শারহ, ৫-৬)।
এই আয়াত আমার মনে দৃঢ় আশাবাদ জাগিয়ে দেয় যে, অল্প কষ্টের পরেই আসবে প্রশান্তি।
আমাদের করণীয়
- প্রথমত, সব সময় সবর বা ধৈর্যের গুণকে আঁকড়ে ধরা।
- কষ্টের সময়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, ইবাদতে মনোযোগী হওয়া।
- কষ্টকে লুকিয়ে না রেখে কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করা, এতে মানসিক চাপ হালকা হয়।
- সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা, কারণ ব্যস্ততা কষ্টকে অনেকটা ভুলিয়ে দেয়।
- পড়াশোনা বা কাজের চাপে মন ক্লান্ত হলে অল্প বিশ্রাম নেওয়া।
- ইতিবাচক বই পড়া, ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থাকা, যাতে মন নতুন উদ্দীপনা পায়।
আমাদের বর্জনীয়
- কষ্টের সময় হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
- অন্যায় পথে সমাধান খোঁজা একেবারেই বর্জনীয়।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও নেতিবাচক চিন্তা এড়ানো জরুরি।
- হতাশা ও অবসাদে ডুবে গিয়ে নিজের ক্ষতি করা থেকে বাঁচতে হবে।
কষ্ট থেকে আরামের পথ
আমি উপলব্ধি করি, কষ্টের মাঝেই আরামের সন্ধান লুকিয়ে থাকে। যখন আমি নামাজে দাঁড়াই, কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করি, দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কান্না করি—তখনই এক ধরনের অদ্ভুত প্রশান্তি আমার হৃদয়ে ভরে যায়। এ প্রশান্তি কোনো দুনিয়াবি স্বস্তির চেয়েও মধুর।
তাই জীবনের কষ্টকে আমি অভিশাপ মনে করি না; বরং এটাকে মনে করি আমার ঈমান, আমার ধৈর্য ও আমার আস্থার পরীক্ষা। যত কষ্ট আসুক না কেন, আমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখি এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—প্রতিটি কষ্টের পরেই একদিন অবশ্যম্ভাবীভাবে আসবে স্বস্তি ও শান্তি।
— লিখেছেন: একজন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে চলমান শিক্ষার্থী
মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি।।
Comments
Post a Comment