সমালোচনার ঊর্ধ্বে এক আলোকবর্তিকা

 

সমালোচনার ঊর্ধ্বে এক আলোকবর্তিকা

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 

রাকিব ভাইয়ের কথাকে কেন্দ্র করে এবং মাজহার ভাইয়ের উৎসাহ প্রদানকে সামনে রেখে কিছু নিবেদন,,,,,
 

মানুষের ভিড়ে এমন কিছু হৃদয়বান আলেম থাকেন, যাদের চারপাশে শুধু আলো ছড়ায়। তাদের আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, বিনয় ও ভালোবাসা এমনভাবে মুগ্ধ করে যে, সমালোচনার ঝড়েও তারা অবিচল থাকেন। আমার হৃদয়ের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, আমার প্রেরণার মূর্ত প্রতীক হযরত মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী (হাফিযাহুল্লাহ) ঠিক এমনই এক দীপ্ত আলোকবর্তিকা।

ঘটনাটি এক দুপুরের। আমরা কয়েকজন প্রিয়জন—আমি, রাকিব, মাজহার ভাই, হুযাইফা ভাই, সাঈদ মাহবুব এবং আরও কিছু সাথী মিলে দস্তরখানায় বসেছিলাম। খাবারের সুবাসে পরিবেশ ছিল শান্ত, কিন্তু আলোচনার বিষয় ছিল মহিমান্বিত। গল্পের স্রোতে হঠাৎ রাকিব ভাই কথা প্রসঙ্গে বললেন, “ভাই, হযরত মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর অনেক গুণ আছে। কিন্তু যে গুণটি আমার হৃদয়কে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত করে তা হলো—তিনি কখনো কারো সমালোচনা করেননি।”

কথাগুলো শুনে আমার ভেতরটা আলোয় ভরে গেল। সত্যিই তো! তিনি যেন সময়ের এক দৃষ্টান্ত, যিনি কটু কথা, বিদ্বেষ, অপবাদ—সবকিছু অতিক্রম করে কেবল ভালোবাসা বিলিয়ে গেছেন। তাঁকে অনেকে কাফের আখ্যা দিয়েছে, তীব্র ভাষায় ব্যঙ্গ করেছে, নানা অভিযোগে বিদ্ধ করেছে। কিন্তু তিনি কি কখনো পাল্টা সমালোচনা করেছেন? না। তাঁর ঠোঁট থেকে কখনো শোনা যায়নি বিদ্বেষমূলক কোনো শব্দ, তাঁর হৃদয় থেকে কখনো ঝরেনি কষ্ট দেওয়ার মতো কোনো আচরণ।

বরং তিনি প্রতিটি আঘাতকে সয়ে নিয়েছেন ধৈর্যের সাথে। তিনি যেভাবে অন্যদের অপমান সহ্য করেছেন, তেমনি অন্যদের সম্মানকে অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। তাঁর প্রতিটি বাক্য যেন ছিল মণিমুক্তা, প্রতিটি উপদেশ যেন ছিল হৃদয়কে নরম করে দেওয়া শান্তির বার্তা। তিনি কাউকে দোষী সাব্যস্ত করেননি, যদিও অনেকেই তাঁকে দোষী করেছে। তিনি কারো হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করেননি, যদিও অসংখ্য আঘাত তাঁকে বিদ্ধ করেছে।

ভালোবাসার প্রেরণা

আল্লাহর বান্দাদের মাঝে তিনি যেন সেইসব বিশেষ মানুষদের একজন, যাদের হৃদয়ে বিরাজ করে অফুরন্ত ভালোবাসা। প্রতিটি মানুষের প্রতি তিনি মন উজাড় করে দিয়েছেন। সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ তাঁর কথায় খুঁজে পেয়েছে শান্তি ও স্বস্তি। এ জন্যই হয়তো তিনি দ্রুত সম্মানের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেছেন।

কেবল কয়েক বছরের মধ্যে আল্লাহ তাঁকে যে সম্মান দান করেছেন, তা দুনিয়ার মানুষ বিস্ময়ের সাথে দেখেছে। ভাবতেই শিহরণ জাগে—যাকে আল্লাহ দুনিয়াতেই এতটা সম্মান দান করেছেন, আখিরাতে তাঁর জন্য কত সম্মান অপেক্ষা করছে!

এক আখলাকের প্রতিচ্ছবি

মাওলানা আজহারী সাহেবের জীবনের একটি বড় দিক হলো—তিনি সমালোচিত হয়েছেন, কিন্তু তিনি সমালোচনা করেননি। অন্যরা বিদ্বেষ ছড়ালেও তিনি ভালোবাসা বিলিয়েছেন। অন্যরা কঠোর বাক্য প্রয়োগ করলেও তাঁর জবাব ছিল নরম কণ্ঠে দোয়া। এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যা আমাদের শেখায়—আসল মহত্ত্ব সমালোচনা করার মধ্যে নয়, বরং সমালোচনা সহ্য করার মধ্যে।

তাঁর এই চরিত্র আমাদের বলে দেয়—মহৎ মানুষরা অন্যকে হেয় করে নয়, বরং অন্যের মর্যাদা রক্ষা করে উন্নতির চূড়ায় পৌঁছান। আজহারী হুজুর যেন সেই বাস্তব প্রতীক, যিনি আখলাকে নববীর আলোয় নিজেকে গড়ে তুলেছেন।

আমাদের দায়িত্ব

আমরা যারা তাঁর অনুসারী, তাঁর প্রতি ভালোবাসায় আপ্লুত, আমাদের দায়িত্ব হলো তাঁর এ আখলাককে জীবনে ধারণ করা। তাঁর মতো কাউকে আঘাত না দিয়ে বরং দোয়া করা, সমালোচনার বদলে সমর্থন দেওয়া, বিদ্বেষের বদলে ভালোবাসা বিলানো—এই চর্চাই আমাদের জীবনকে সুন্দর করতে পারে।

একদিন হয়তো আমরা আমাদের সাথী ভাই রাকিবের মতো গর্বভরে বলতে পারব, “আমরা এমন একজন মানুষের অনুসারী, যিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিলেন।”

উপসংহার

হযরত মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী হুজুর নিছক একজন বক্তা বা আলেম নন, তিনি এক আলোকবর্তিকা। তাঁর জীবন আমাদের বলে দেয়—সত্যের পথে থাকতে হলে ধৈর্যের সাথে চলতে হবে, ভালোবাসার বাণী ছড়াতে হবে।

তিনি আমাদের হৃদয়ের মানুষ, আমাদের মনের মানুষ। আমরা দোয়া করি—আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্বাস্থ্য দান করুন, দীর্ঘজীবী করুন এবং আখেরাতে তাঁকে সিদ্দিকীন, শুহাদার ও সালেহীনদের কাতারে উঁচু মর্যাদা দান করুন। আমীন।

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি