ছাত্রজীবনে সুন্দর লেখা অর্জনের গুরুত্ব
ছাত্রজীবনে সুন্দর লেখা অর্জনের গুরুত্ব
শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপেই একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়—সুন্দর লেখা। লেখা হলো মানুষের অন্তরের ভাষাকে প্রকাশ করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। একজন ছাত্র যদি সুন্দরভাবে লিখতে না পারে, তবে তার জ্ঞানের আলো অর্ধেকই ঢাকা থেকে যায়। স্কুলের ছাত্র হোক, কলেজের ছাত্র হোক কিংবা মাদ্রাসার ছাত্র—প্রত্যেকের জন্যই সুন্দর লেখা অপরিহার্য। শুধু পাঠ্যবই মুখস্থ করলেই হবে না, বরং তা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে কলমের মাধ্যমে।
মাতৃভাষায় সুন্দর লেখার প্রয়োজনীয়তা
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তাই একজন ছাত্রের জন্য সবচেয়ে আগে দরকার বাংলা ভাষায় সুন্দর লেখা। মুখের ভাষা যেমন শুদ্ধ করতে হয়, তেমনি লেখার ক্ষেত্রেও দরকার শুদ্ধ বানান, সঠিক ব্যাকরণ এবং সাহিত্যিক আবহ। যদি বাংলা ভাষায় সুন্দরভাবে লেখা না যায়, তবে পরীক্ষায় যেমন নম্বর কাটা যাবে, তেমনি সহপাঠীদের কাছেও পিছিয়ে পড়তে হবে।
আরবি ও উর্দুতে মাদ্রাসার ছাত্রদের দায়িত্ব
বিশেষত মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য লেখা সুন্দর করা ওয়াজিব। কারণ তারা শুধু বাংলা নয়, বরং আরবি ও উর্দুতেও দক্ষ হতে হবে। لغة القرآن (কুরআনের ভাষা) আরবি—এতে যদি লেখা সুন্দর না হয়, তবে ইলমের প্রকৃত স্বাদ লাভ করা কঠিন। আরবি হরফ সঠিকভাবে না লিখলে অর্থও বদলে যেতে পারে। একইভাবে উর্দু ভাষা মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানভাণ্ডার হওয়ায় এর লেখাতেও সাবলীলতা প্রয়োজন।
লেখা সুন্দর করার উপকারিতা
- পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পাওয়া যায়।
- ওস্তাদের মনে ছাত্রের প্রতি সম্মান জন্মায়।
- সুন্দর লেখার কারণে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়।
- একজন ছাত্র নিজের লেখা দিয়ে অন্যকে শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়।
- সাহিত্য, প্রবন্ধ, নোট ও ডায়েরি রচনায় সহজতা আসে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা
আমরা দেখি, অতীতের আলেম ও সাহিত্যিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে ইতিহাস অমর করে গিয়েছেন। ইমাম গযযালী (رحمه الله) তাঁর إحياء علوم الدين গ্রন্থে যে সাহিত্য ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন, তা এখনো মানুষের হৃদয়কে আলোড়িত করে। আল্লামা ইকবালের (رحمه الله) কবিতার সৌন্দর্য তাঁর লেখনীর পরশে স্থায়ী মহিমা লাভ করেছে। তাদের লেখনী আজো প্রমাণ করে—সুন্দর লেখা শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার উপায় নয়, বরং এটি ইতিহাস গড়ার সোপান।
লেখা সুন্দর করার টিপস
লেখাকে সুন্দর করার জন্য কিছু ব্যবহারিক পদক্ষেপ:
- নিয়মিত অনুশীলন: প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাতের লেখা অনুশীলন করতে হবে।
- সঠিক খাতা ও কলম: মোটা বা পাতলা অক্ষর লেখার জন্য উপযুক্ত কলম ব্যবহার করতে হবে।
- বানান শুদ্ধি: প্রতিটি শব্দ সঠিকভাবে লেখার অভ্যাস করতে হবে। বানান ভুল যেন না হয়।
- সাহিত্য পাঠ: ভালো সাহিত্য পড়তে হবে, এতে ভাষার রুচি তৈরি হবে এবং লেখার সৌন্দর্য বাড়বে।
- নিয়মিত রোজনামচা লেখা: প্রতিদিনের ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে লেখা চলমান থাকবে।
- কিতাব কপি করা: প্রাচীন আলেমরা যেভাবে কিতাব নকল করতেন, সেভাবে কিতাব থেকে সুন্দর লেখা কপি করার অভ্যাস করতে হবে।
- আরবি-উর্দু-বাংলা তিন ভাষায় চর্চা: মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য বিশেষভাবে জরুরি।
পরিশেষে বলতে চাই,,
সুতরাং, লেখা সুন্দর করা প্রত্যেক ছাত্রের জন্য অপরিহার্য। এটি শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মর্যাদা অর্জনের জন্য প্রয়োজন। সুন্দর লেখা একজন ছাত্রের ইলমকে আলোকিত করে, তার ব্যক্তিত্বকে শোভিত করে এবং তাকে সমাজে বিশেষ স্থান দান করে। কলমের মাধ্যমে ইতিহাস গড়া যায়, চিন্তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং জ্ঞানের আলো দূর-দূরান্তে পৌঁছে দেওয়া যায়। তাই আসুন, আমরা সবাই লেখাকে সুন্দর করার চেষ্টা করি, যেন আমাদের লেখনীও আগামী প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকে।
Comments
Post a Comment