রাতে না ঘুমিয়ে মোবাইল চালানো : করণীয় ও বর্জনীয়

 

রাতে না ঘুমিয়ে মোবাইল চালানো : করণীয় ও বর্জনীয়

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 
 

আধুনিক সভ্যতার এক অনিবার্য সঙ্গী হলো মোবাইল ফোন। এটি আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে—যোগাযোগ সহজ হয়েছে, জ্ঞান অর্জনের পথ উন্মুক্ত হয়েছে, বিশ্ব আজ মুঠোফোনের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়। কিন্তু অতি প্রিয় এই যন্ত্রটি যখন রাতের গভীর নীরবতা ভেঙে আমাদের চোখ, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকে আক্রমণ করে, তখন সেটিই হয়ে ওঠে অভিশাপের মত ক্ষতিকর।

রাতে ঘুমের সময় মানুষ শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেয়, আত্মাকে শান্ত করে। অথচ মোবাইল স্ক্রিনের নীল আলো সেই শান্তিকে গ্রাস করে ফেলে। চোখে eye strain সৃষ্টি হয়, মাথায় headache জন্ম নেয়, স্নায়ু হয় উত্তেজিত। Sleep cycle বা ঘুমের চক্র ভেঙে যায়, পরদিন শরীর হয় অবসন্ন, মন হয় ক্লান্ত। একবার দুইবার হলে হয়ত সহনীয় মনে হয়, কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যাসে এটি ধীরে ধীরে বিষের মত শরীরকে গ্রাস করে।

ক্ষতিকর দিকসমূহ

  • চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে যায়, dry eye ও অকাল চশমার প্রয়োজন দেখা দেয়।
  • মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, ফলে মনোযোগ কমে যায় ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়।
  • রাতে ঘুম না হওয়ায় পরদিন কাজের প্রতি অনীহা জন্ম নেয়।
  • মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ ও হতাশা বৃদ্ধি পায়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

কি বর্জনীয়?

মোবাইলের প্রতি আসক্তি যদি রাতের ঘুম কেড়ে নেয়, তবে প্রথমেই কিছু জিনিস বর্জন করা অপরিহার্য।

  • ঘুমানোর আগে social media scrolling পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
  • বিছানায় শুয়ে ইউটিউব ভিডিও বা সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অপ্রয়োজনীয় chatting ও রাত জাগা আলাপ বন্ধ করতে হবে।
  • ফোনের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা (brightness) বেশি রাখার অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
  • “আরও পাঁচ মিনিট” ভেবে সময় নষ্ট করা পুরোপুরি বর্জনীয়।

কি করণীয়?

মোবাইল ব্যবহারকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়ত সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। কিছু করণীয় পদক্ষেপ জীবনকে অনেক সুন্দর ও সুস্থ করতে পারে।

  • রাত দশটার পর থেকে মোবাইল ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
  • ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে mobile off বা silent mode করে রাখতে হবে।
  • বিছানায় মোবাইল নিয়ে না যাওয়াই শ্রেয়।
  • রাতে কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া বা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  • মোবাইলের অ্যালার্মের প্রয়োজন হলে সেটি দূরে রেখে দিতে হবে।
  • দিনের বেলায় প্রয়োজনীয় কাজ গুছিয়ে রাখতে হবে যাতে রাতে অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে না হয়।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ঘুম গভীর ও স্বস্তিদায়ক হয়।

পরিশেষে বলতে চাই,,,

মোবাইল একটি বরকতময় যন্ত্র—যদি সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অপব্যবহারই মানুষকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। রাতের নীরবতা ঘুমের জন্য, আত্মার প্রশান্তির জন্য। মোবাইলের আলো দিয়ে সেই প্রশান্তি গ্রাস করলে তা ধ্বংসের কারণ হবে। তাই আজই প্রতিজ্ঞা করি, আমরা মোবাইলকে নিয়ন্ত্রণ করব, মোবাইল যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।

 রাত ঘুমের জন্য, মোবাইলের জন্য নয় 

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি