প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি ও আমাদের অনুভূতি
প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি ও আমাদের অনুভূতি
গতকাল ছিল বুধবার। আমাদের সম্মানিত শিক্ষক মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান স্যার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন—আজ বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার মধ্যেই সকল প্রতিযোগীকে উপস্থিত থাকতে হবে। তাঁর সেই স্নেহমাখা আহ্বানকে আমি অন্তরে ধারণ করে দুপুর সাড়ে তিনটার আগেই উপস্থিত হলাম। আসার পর থেকেই মনে হলো, বাতাসে যেন এক অদৃশ্য সাহস আর উদ্দীপনার সুর ভাসছে। প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির সেই মুহূর্তগুলোতে আমাদের অন্তরের প্রতিটি স্পন্দন মিশে ছিল অগণিত প্রত্যাশায়, মিশে ছিল অদম্য স্বপ্নে।
যখন ঘড়ির কাঁটা চারটা স্পর্শ করল, তখন আমাদের একে একে ডাকা হলো। প্রস্তুতিমূলক বক্তব্য যেন একেকটি দীপশিখার মতো আলো ছড়িয়ে দিল মঞ্চে। আমাদের ছেলেদের পক্ষ থেকে অংশ নিল ছয়জন—ইমরান ভাই, আবির ভাই, ফয়সাল ভাই, রিয়াদ ভাই, আলামীন ভাই এবং সর্বশেষে আমি নিজে। প্রত্যেকে নিজের কণ্ঠে শহরের প্রশংসার কাব্য রচনা করল। তাদের প্রতিটি বাক্য যেন সাহসের ডানায় ভর করে উড়তে শিখিয়েছে, প্রতিটি উচ্চারণ যেন ইংরেজি ভাষার বাগানে প্রস্ফুটিত ফুলের মতো সুবাস ছড়িয়েছে। আমি-ও চেষ্টা করেছি, আল্লাহর তৌফিক নিয়ে কিছুটা হলেও সেই স্রোতে ভেসে যেতে।
অপরদিকে, আমাদের ছয় বোন—নুরজাহান আপু, লিমা আপু, মুন আপু, লামিয়া আপু, মারিয়া আপু এবং আমেনা আপু—তাদের মধুর উচ্চারণে গ্রামের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। তাদের প্রতিটি শব্দ যেন সবুজ মাঠের ঘ্রাণ নিয়ে এসেছে, প্রতিটি বাক্য যেন গ্রামীণ পাখির কূজনের মতো হৃদয়ে মধুর ধ্বনি তুলেছে। তারা আত্মবিশ্বাসে ভরা কণ্ঠে যেন বাতাসকেও থমকে দিয়েছিল। নিঃসন্দেহে, তারা আমাদের হৃদয়কে গ্রামবাংলার সৌন্দর্যে ভিজিয়ে তুলেছে।
মূলত এই প্রতিযোগিতার আসল লক্ষ্য জয়-পরাজয় নয়। বরং লক্ষ্য হলো—আমাদের সাহসের মাপকাঠি কতদূর বিস্তৃত হলো, আমাদের উচ্চারণ কতটা শুদ্ধ হলো, আর আমরা কতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইংরেজি ভাষার পরশ স্পর্শ করতে পারলাম। এটি ছিল যোগ্যতার পরীক্ষা, আত্মপ্রকাশের মহড়া, আর স্বপ্নপূরণের পথে এক দীপ্ত পদক্ষেপ।
এই সব কিছুর আড়ালে যিনি আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, যিনি তাঁর সময়, শ্রম, স্বাস্থ্য উৎসর্গ করে আমাদের গড়ে তুলছেন—তিনি আমাদের প্রিয় শিক্ষক মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান স্যার। তাঁর প্রতিটি ত্যাগ যেন বাতিঘরের আলো, যা আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তিনি অক্লান্ত শ্রমে আমাদের শিখাচ্ছেন কীভাবে আমরা ভাষার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াতে পারি। তাঁর সেই অদম্য মেহনতের ঋণ শোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি—তিনি যেন স্যারকে সুস্থতা দান করেন, তাঁর পরিবারকে রহমতের ছায়ায় রাখেন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।
আগামীকাল শুক্রবার—হয়তো আমরা কেউ বিজয়ী হবো, কেউ পরাজিত। কিন্তু আসল বিজয় হবে তখনই, যখন আমরা বুঝব—আমাদের কণ্ঠে সাহস জন্ম নিয়েছে, আমাদের হৃদয়ে আত্মবিশ্বাসের আলো জ্বলে উঠেছে, এবং আমাদের জীবনে ভাষার নতুন এক জানালা খুলেছে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আর আমাদের প্রিয় স্যারের আশা পূর্ণ হোক আমাদের মাধ্যমেই। আমীন।
Comments
Post a Comment