ইলম অর্জনের কষ্ট ও পদক্ষেপ

ইলম হলো এমন এক মহামূল্যবান সম্পদ, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মাঝে বণ্টন করেন। কিন্তু এই সম্পদ সহজে অর্জিত হয় না। শত কষ্ট, ত্যাগ ও ধৈর্যের সাগর পাড়ি দিতে হয়। কবির ভাষায়:

“মণি-মুক্তা সহজে মেলে না সাগরের বুকে,
ডুব দিতে হয়, তবেই ধরা দেয় রত্নভাণ্ডার।”

কষ্টের উদাহরণ

ইতিহাসে আমরা দেখি, ইমাম বুখারী (রহ.) একেকটি হাদীস সংগ্রহ করার জন্য হাজার মাইল পথ অতিক্রম করেছেন। তিনি কখনো অনাহারে থেকেছেন, কখনো ঘুমের সময় ত্যাগ করেছেন, কিন্তু জ্ঞান অর্জনের পথে বিরত হননি।

আবার ইমাম শাফেয়ী (রহ.) শৈশবে লেখার জন্য কাগজ না পেয়ে হাড়, পাতা ও কাপড়ে জ্ঞান লিপিবদ্ধ করতেন। আল্লাহর রাসূল ﷺ-ও বলেছেন: জ্ঞান কেবল শিক্ষা দ্বারা অর্জিত হয় (হাদীস: বুখারী)। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইলম অর্জনের জন্য নিরন্তর চেষ্টা ও কষ্ট অপরিহার্য।

ইলম অর্জনের কয়েকটি পদক্ষেপ

  1. নিয়ত শুদ্ধ করা: প্রথমেই মনে রাখতে হবে, ইলম শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্জন করতে হবে। দুনিয়াবি খ্যাতি বা সম্মানের জন্য নয়।
  2. ধৈর্য ও অধ্যবসায়: কষ্ট, দারিদ্র্য কিংবা ঘুম ত্যাগ—এসবের মধ্য দিয়েই বড় আলেমগণ ইলম অর্জন করেছেন। তাই ধৈর্যই হলো মূল চাবিকাঠি।
  3. উস্তাদের সাথে সম্পর্ক: প্রকৃত ইলম অর্জনের জন্য যোগ্য উস্তাদের তত্ত্বাবধান অপরিহার্য। ইমাম মালিক (রহ.) বলেছেন: “ইলম হলো আলো, আর সেই আলো উস্তাদের মাধ্যমে আসে।”
  4. নিয়মিত মুতালা'আ: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা করা এবং নোট লিখে রাখা জ্ঞানের শক্ত ভিত গড়ে দেয়।
  5. আমল করা: শেখা জ্ঞানকে আমলে রূপান্তরিত না করলে জ্ঞান নিছক তথ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তাই ইলমকে জীবনে প্রয়োগ করা অপরিহার্য।

সাহিত্যের আলোকে উপলব্ধি

কবি বলেছেন—

“ঘুম পাড়িয়ে দেবে যে স্বপ্নে ডুবিয়ে,
সে তো জ্ঞান নয়, অলসতার ছল;
সত্যিকার ইলম তো কাঁটায় ভরা পথে,
কষ্টের বুকে ফোটায় ফুলের দল।”

তাই ইলমের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে কষ্টকে আপন করতে হবে, ধৈর্যকে পথের সাথী বানাতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে—তিনি যেন আমাদের অন্তরে সত্যিকারের ইলমের আলো দান করেন।

ইলম হলো আলো, আর সে আলো অর্জনের জন্য কষ্টই হলো সেতু।

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি