মাদ্রাসা ছাত্রদের হতাশা ও সঠিক পথের সন্ধান
মাদ্রাসা ছাত্রদের হতাশা ও সঠিক পথের সন্ধান
আমাদের সমাজে একটি বড় সমস্যা হলো হতাশা। বিশেষত মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে এটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়। অনেকেই পড়াশোনা শেষ করার পর মনে করে—“আমি কি করব?”, “আমার ভবিষ্যৎ কি হবে?”, “আমি কি আদৌ যোগ্য কিছু করতে পারব?”। এসব প্রশ্ন অনেককে ভেতর থেকে কুরে খায়। আমি নিজেও একজন মাদ্রাসা ছাত্র। তাই সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই দুশ্চিন্তার ভার আমি গভীরভাবে অনুভব করি।
অনেকে ভাবে—এই কিতাবাদি পড়ে ভবিষ্যতে কি হবে? অনেকেই আবার বলে—আমার টাকার প্রয়োজন, তাই আমাকে অন্য কিছু শিখতে হবে। এর ফলে দেখা যায়, কেউ বাংলা সাহিত্য, কেউ ইংরেজি সাহিত্য, আবার কেউ কম্পিউটার শিখে জীবনের পথ খোঁজে। অথচ বাস্তবতা হলো, আমরা যদি আমাদের মাদ্রাসার পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করি, তবে হতাশা আসার কোনো কারণ নেই। কেননা কিতাবগুলোই জ্ঞানের মূলধন। এগুলো যদি আমরা আয়ত্ত করতে পারি, তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের যোগ্যতার ঘাটতি থাকবে না।
﴿وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا﴾ (সূরা ত্বাহা, ২০:১১৪)
অর্থ: “বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।”
আমাদের মধ্যে অনেকেই মূল কিতাবগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারে না। যখন আমরা বুঝতে পারি না, তখন ভেতরে এক ধরনের ভয় কাজ করে। মনে হয়—“আমি যদি শিক্ষক হই, আমি কীভাবে পড়াব? আমি তো নিজেই বুঝি না।” এই চিন্তাই হতাশার জন্ম দেয়। তখন অনেকেই মাদ্রাসার মূল পড়া ছেড়ে অন্য দিকে ঝুঁকে যায়—ক্যালিগ্রাফি, হাতের লেখা, ব্যবসা ইত্যাদির দিকে। কিন্তু এগুলো আসল পথ নয়। এগুলো তখনই মূল্যবান হবে, যখন আমরা মূল কিতাবগুলো আয়ত্ত করব।
হ্যাঁ, মাদ্রাসার কিতাব ভালোভাবে পড়ার পাশাপাশি কেউ যদি ফাঁকা সময়ে কম্পিউটার শেখে, ইংরেজি শেখে, বাংলা সাহিত্য শেখে—এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং তা ভালোই। কারণ এগুলো তাকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করবে। কিন্তু এগুলো যেন কখনো মূল শিক্ষার বিকল্প না হয়। প্রথমে আমাদের দরকার—মিজান জামাত থেকে শুরু করে দাওরা পর্যন্ত প্রতিটি কিতাব ভালোভাবে আয়ত্ত করা।
قال رسول الله ﷺ: «من يرد الله به خيرًا يفقهه في الدين» (বুখারী ও মুসলিম)
অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আল্লাহ যাকে কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।”
তাই হতাশা নয়, বরং আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত—দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন। যদি আমরা উলুমুল হাদীসের একজন দক্ষ আলেম হতে পারি, ফিকহে একজন যোগ্য মুফতী হতে পারি, অথবা তাফসীরের একজন বিজ্ঞ মুফাসসির হতে পারি, তাহলে এর চেয়ে বড় সাফল্য আর কিছু হতে পারে না। ভবিষ্যতে আমরা কিতাব লিখলে সেটি শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতেও আমাদের জন্য সওয়াবের দরজা খুলে দেবে।
অবশ্যই, অতিরিক্ত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকলে, ফাঁকা সময়ে তা শেখা উচিত। কিন্তু শর্ত হলো—প্রথমে আমাদের মৌলিক কিতাবগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। কারণ যে ছাত্র ক্লাসের কিতাবই বুঝতে পারে না, অথচ উপন্যাস পড়ে বা ভিন্ন কিতাব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তার ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হয় না।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন, হতাশা থেকে মুক্ত করুন, এবং দ্বীনের খেদমতের জন্য যোগ্য আলেম বানান। আমীন।
Comments
Post a Comment