অন্যের অগ্রগতি দেখে হিংসা নয়, দোয়া করা শিখি
অন্যের অগ্রগতি দেখে হিংসা নয়, দোয়া করা শিখি
আগ্রহী পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আমি কিছু কথা বলতে চাই। আমাদের বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমরা যখন দেখি কেউ ইলমে বা দক্ষতায় উন্নতি করছে, তার লেখা, সাহিত্য, বা শিল্প সমাজে আলো ছড়াচ্ছে, তখন অনেকের মনে দোয়ার বদলে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে। তার ছায়াও সহ্য করতে চায় না অনেকে। অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে— অন্যের অগ্রগতি দেখে হিংসা নয়, বরং দোয়া করা।
কুরআনের দিকনির্দেশনা
“তোমরা কামনা করো না আল্লাহ যেভাবে তোমাদের কারো ওপর কারোকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।”
(সূরা নিসা ৪:৩২)
এই আয়াত স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিচ্ছে—অন্যের অগ্রগতির দিকে লোভ বা হিংসার চোখে তাকাবে না। বরং আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতকে স্বীকার করবে এবং তার জন্য দোয়া করবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষা
“তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্যও সেই জিনিসই পছন্দ করে
যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।”
(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
অর্থাৎ অন্যের উন্নতি দেখে খুশি হওয়া, দোয়া করা এবং সমর্থন দেওয়া—এটাই প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন।
সমালোচনার বদলে প্রশংসা
ধরো, একজন ছাত্রের হাতের লেখা অত্যন্ত সুন্দর। এটা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা শুরু করে। অথচ লেখার সৌন্দর্যও ইলমেরই একটি শাখা। আরেকজন যদি বাংলা সাহিত্য, আরবি সাহিত্য কিংবা গজল নিয়ে পরিশ্রম করে, তাহলেও সমালোচনার কিছু নেই। কারণ প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে সমাজকে সমৃদ্ধ করছে।
হিংসার বদলে দোয়ার শিক্ষা
“কেন আমরা অন্যের উন্নতি দেখে জ্বলে উঠব? বরং বলা উচিত—আল্লাহ, তার কাজে আরও বরকত দাও।”
শরীয়ত বিরোধী কাজ হলে অবশ্যই বিরোধিতা করতে হবে। কিন্তু কোনো বৈধ কাজে অগ্রগতি করলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, সমালোচনা করা, হিংসা করা—এসব মুমিনের শান নয়।
সমাজের বাস্তব উদাহরণ
যদি রাজমিস্ত্রির বিরুদ্ধে সবাই যায়, তাহলে ঘর বানাবে কে? যদি কাঠমিস্ত্রির বিরুদ্ধে লাগে, তাহলে খাট-পালঙ্ক তৈরি করবে কে? যদি ব্যবসায়ীদের সমালোচনা করি, তাহলে ধান-চাল-গম আসবে কোথা থেকে? প্রত্যেকেই আলাদা পথে সমাজকে সমৃদ্ধ করছে।
গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
- অন্যের উন্নতিতে হিংসা না করে তাকে দোয়া করা।
- প্রত্যেককে তার পছন্দের ক্ষেত্রে মেহনত করতে দেওয়া।
- সাহিত্য, ইলম, শিল্প, কারিগরি—সবক্ষেত্রের গুরুত্ব স্বীকার করা।
- সমালোচনার পরিবর্তে অনুপ্রেরণা দেওয়া।
- নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে আল্লাহর কাছে কবুলিয়াত চাওয়া।
শেষকথা
আমি বলছি—অন্যের অগ্রগতি দেখে হিংসা করো না। বরং দোয়া করো, সমর্থন দাও। মুমিনের অন্তর যেন সব সময় প্রশস্ত থাকে। সমালোচনা নয়, বরং দোয়াই হবে আমাদের কাজ। সমাজ তখনই সমৃদ্ধ হবে যখন আমরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করব এবং একে অপরকে সহযোগিতা করব।
Comments
Post a Comment