প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি ও অনুভূতির কাব্য

 

প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি ও অনুভূতির কাব্য

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা দ্বীনের দ্বীপ্তি 
 

আজ বৃহস্পতিবার। গতকালই আমাদের প্রিয় শিক্ষক, মহান হৃদয়ের মানুষ মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান স্যার ঘোষণা করেছিলেন—বিকাল চারটার মধ্যেই প্রতিযোগিতার প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে উপস্থিত থাকতে হবে। স্যারের সেই ডাকে যেন আকাশ ভরে উঠেছিল উৎসাহের আলোয়। আমি সাড়ে তিনটার আগেই এসে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, প্রতিটি শ্বাসে শোনাচ্ছে নতুন প্রত্যাশার সুর, প্রতিটি দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছে অদম্য সাহসের অঙ্গীকার।

চারটা বাজতেই শুরু হলো আহ্বান। আমাদের একে একে ডাকা হলো। প্রতিযোগিতার মঞ্চ যেন এক বাগান, আর আমরা ছিলাম সেখানে ফোটা ফুল। ছেলেদের পক্ষ থেকে অংশ নিল ছয়জন—ইমরান ভাই, আবির ভাই, ফয়সাল ভাই, রিয়াদ ভাই, আলামীন ভাই এবং সর্বশেষে আমি। ইমরান ভাই ছিলেন যেন দৃঢ় কণ্ঠের প্রতীক, তাঁর প্রতিটি শব্দে শক্তি আর আত্মবিশ্বাসের ঝংকার। আবির ভাই ছিলেন সাহিত্যিক ঝরনার মতো—প্রতিটি বাক্যে ছিল কোমলতার স্রোত। ফয়সাল ভাই যেন ছিলেন সুবিন্যস্ত সুরের শিল্পী, যার উচ্চারণ মঞ্চকে সুরভিত করেছে। রিয়াদ ভাই ছিলেন জ্ঞানী প্রভাতের মতো, তাঁর কথায় ছিল ভাবনার গভীরতা। আলমীন ভাই ছিলেন অটল সাহসের প্রতীক, যিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে আলোর শিখার মতো প্রজ্জ্বলিত ছিলেন। আর আমি—ত্বলহা—চেষ্টা করেছি তাদের সঙ্গে তাল মেলাতে, যদিও তাদের দীপ্তির কাছে আমি ক্ষুদ্র আলো।

অপরদিকে, আমাদের ছয় বোনও যেন মঞ্চে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন অপরূপ সৌন্দর্যের রং। নুরজাহান আপু ছিলেন পূর্ণিমার চাঁদ—তাঁর বাক্যে শোনাত আলোর ঝলক। লিমা আপু ছিলেন বসন্তের বাতাস, যার কথায় ছিল কোমলতার শীতল স্পর্শ। মুন আপু ছিলেন সজীব ফুলের মতো, প্রতিটি বাক্যে প্রস্ফুটনের সৌন্দর্য। লামিয়া আপু ছিলেন স্রোতস্বিনী নদীর মতো, নিরবচ্ছিন্ন ও প্রাঞ্জল বর্ণনায় তিনি হৃদয় জয় করেছেন। মারিয়া আপু ছিলেন ভোরের শিশিরবিন্দু, যার কোমল কণ্ঠ মঞ্চে ছড়িয়েছে নির্মলতার আভা। আর আমেনা আপু ছিলেন যেন দৃঢ়তার মিনার, তাঁর কণ্ঠে ছিল আত্মবিশ্বাসের গর্জন।

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ভাই-বোনদের এই মিলিত পরিবেশনা যেন ছিল এক অপূর্ব গাঁথা। গ্রাম আর শহরের প্রশংসা মিলেমিশে যেন তৈরি করেছিল নতুন দিগন্তের কাব্য। ছেলেদের কণ্ঠে শোনা গেছে নগর সভ্যতার দীপ্তি, বোনদের কণ্ঠে ভেসেছে গ্রামের স্বর্গীয় সৌন্দর্য। দু’দল মিলে যেন একটি পূর্ণ চিত্রকলা এঁকেছে, যেখানে শহর আর গ্রাম একে অপরের হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

তবে এই সব সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন আমাদের স্যার—মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান। তাঁর অক্লান্ত মেহনত, নিঃস্বার্থ শ্রম আর শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালোবাসাই আমাদের এই সাহসের মূল উৎস। তিনি যেন বাতিঘর, আমরা সেই আলোর সন্ধানী নাবিক। তাঁর আত্মত্যাগের জন্য ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অসম্ভব। আমরা কেবল দোয়া করি, আল্লাহ তাঁকে সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন।

আগামীকাল শুক্রবার—হয়তো একদল বিজয়ী হবে, হয়তো অন্যদল পিছিয়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃত বিজয় তো আমরা আগেই অর্জন করেছি। আমাদের কণ্ঠে সাহস জন্ম নিয়েছে, আত্মবিশ্বাস আমাদের অন্তরে জেগে উঠেছে, আর ইংরেজি ভাষার বাগান আমাদের হৃদয়ে ফুটে উঠেছে। জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে এই অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অর্জন।

— ত্বলহা

Comments

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি