একজন তালেবে ইলমের আদর্শ গুণাবলী

 

একজন তালেবে ইলমের আদর্শ গুণাবলী

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা

ভূমিকা

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এই দ্বীন হিফাজতের জন্য আল্লাহ তাআলা নবীদের পর ওলামায়ে কেরাম ও তালিবুল ইলমদের দ্বায়িত্ব দিয়েছেন। তালেবে ইলম অর্থাৎ ইলম অন্বেষণকারী হল সেই ব্যক্তি, যিনি এই আল্লাহর নাযিলকৃত ওহীর জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন। এই শ্রেণির মানুষের জন্য মহান দায়িত্ব রয়েছে, তাই তাদের চরিত্র, অভ্যাস ও নৈতিকতা হতে হবে আদর্শবান।

সালাফে সালেহীনের দৃষ্টিতে তালেবে ইলমের গুণাবলী

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন:

"أخي لن تنال العلم إلا بستةٍ، سأُنبيك عن تفصيلها ببيان: ذكاءٌ وحرصٌ واصطبارٌ وبلغةٌ، وإرشادُ أستاذٍ وطولُ زمانِ."
অর্থাৎ: “হে ভাই! তুমি ছয়টি বিষয়ের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে: বুদ্ধিমত্তা, আগ্রহ, ধৈর্য, সামর্থ্য, উস্তাদের দিকনির্দেশনা, এবং দীর্ঘ সময়।”

ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন: “তালিবে ইলম যেন তার জবান সংযত রাখে, অহংকার না করে, এবং রাতের ইবাদাতে অভ্যস্ত হয়।”

খালাফ ও পরবর্তী ওলামায়ে কেরামের আলোচনায় তালিবুল ইলমের বৈশিষ্ট্য

ইমাম নববী (রহ.) ‘আদাবুল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী’ কিতাবে বলেন: “তালেবে ইলম যেন তার ইলমকে আমলের মাধ্যমে ফলপ্রসূ করে, ইখলাস রাখে এবং উস্তাদের প্রতি বিনয় প্রকাশ করে।”

শাইখ বাকার ইবনে আবদুল্লাহ আবু যায়েদ বলেন: “তালিবে ইলম যেন ফিতনা ও বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, কিতাব ও সুন্নাহর মানহাজে মজবুত থাকে এবং দল ও ফেরকা নিরপেক্ষভাবে হক অনুসন্ধান করে।”

আধুনিক যুগে একজন আদর্শ তালেবে ইলমের জন্য করণীয়

  • শরীয়তের ইলম গ্রহণে একনিষ্ঠ হওয়া
  • নামায, রোযা, ইবাদতে দৃঢ় হওয়া
  • উস্তাদদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া
  • আখলাক সুন্দর করা
  • সামাজিক মিডিয়া ও নফসী ফিতনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা
  • বাতিল ফেরকার বইপত্র ও সঙ্গ ত্যাগ করা
  • নিজেকে ‘দাঈ’ নয়, ‘তালিব’ মনে করা
  • বিনয়, ধৈর্য ও পরিশ্রমের গুণ অর্জন করা

কোন বিষয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরি?

১. অহংকার ও আত্মপ্রশংসা: ইলম অর্জনের পর অনেকের মাঝে অহংকার আসে। এটা ধ্বংস ডেকে আনে।
২. ফেসবুক, ইউটিউব আসক্তি: তালিবে ইলম যেন অনাবশ্যক সময় ব্যয় না করে।
৩. বাতিল দল ও সন্দেহজনক চিন্তার দিকে ঝুঁকে পড়া: যেন হক ও সুন্নাহর পথ থেকে বিচ্যুত না হয়।

সুতরাং,,,,

একজন তালেবে ইলম হল ভবিষ্যতের উম্মাহর আলোকবর্তিকা। তাকে আদর্শ, আমলী, বিনয়ী ও মেহনতী হতে হবে। সালাফ-খালাফের দেখানো পথে চলা এবং দ্বীনকে নিজের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু বানানো ছাড়া ইলম কখনো বরকতময় হবে না।

মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ত্বলহা

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

“দ্বীনের দীপ্তি: ইসলামের মূল শিক্ষা”

স্মৃতির প্রাঙ্গণ ও মাধুর্যের ঋণ

📘 প্রথম সাময়িক পরীক্ষার প্রস্তুতি